বিস্তার পরিমাপের পদ্ধতি, প্রয়োজনীয়তা ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধর
ভূমিকা: সামাজিক পরিসংখ্যানের বিজ্ঞার পরিমাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোন নিবেশনের মানসমূহের কেন্দ্রীয় মান আজকে অন্যান্য মান এর গুরুত্বকে সঠিকভাবে পরিমাপ করার জন্য শুধু জান একক পদ্ধতি অনুসারে চললে হয় না। তথ্যের পরিমাণের শুদ্ধতার জন্যই কতিপয় বিস্তার পরিমাপ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
বিস্তার পরিমাপের পদ্ধতিসমূহ: বিস্তার পরিমাপের বিভিন্ন প্রক্রিয়া রয়েছে । এ প্রক্রিয়াগুলোকেই শ্রেণিবিভাগ বা প্রকারভেদ রুপে গঠন করা হয়। বিস্তার পরিমাপ প্রধানত ২ প্রকার। যথা- ১. অনপেক্ষ বা পরম পরিমাপ এবং ২. আপেক্ষিক পরিমাপ।
১. অনপেক্ষ বিস্তার পরিমাপ: যখন কোন তথ্য মানকে মানসমূহের একক অনুসারে প্রকাশ করা হয় তখন তাদেরকে অনুপেক্ষ বা পরম বিস্তার পরিমাপ বলে। এটি প্রধানত ৪ প্রকার।
যথা-১. পরিসর (Range),
২. চতুর্থক ব্যবধান (Quartile deviation)
৩. গড় ব্যবধান (Mean deviation) এবং
৪. পরিমিত ব্যবধান বা আদর্শ বিচ্যুতি ও ভেদাংক (standard deviation and variance)
২. আপেক্ষিক বিস্তার পরিমাপ: যখন কোন তথ্যমালাতে মানসমূহের একক অনুসারে প্রকাশ করার পর তাকে আবার অনুপাত ও শতকরায় দেখানো হয় তখন তাকে বলে আপেক্ষিক বিস্তার পরিমাপ। এটি ও চার প্রকার হয়ে থাকে। যথা-
১. পরিসরাংক বা পরিসরের সহগ (Co efficient of range)
২. চতুর্থক ব্যবধানাংক বা চতুর্থক ব্যবধানের সহগ (Co efficient of quartile deviation)
৩. গড় ব্যবধানাংক বা গড় ব্যবধানের সহগ (Co efficien of mean deviation)
৪. ব্যবধানাংক বা বিভিদাংক বা পরিমিত ব্যবধানের সহগ (Co-efficient of standard deviation or variation)
উপযুক্ত তথ্যসারির মাধ্যমে পদ্ধতিগুলোর কেন্দ্রীয় রাশি থেকে অন্যান্য রাশির সঠিক দুরত্ব পরিমাপ করা যায়। এবং বিস্তার পরিমাপের সাহায়ে তথ্যসারির প্রতিটি সংখ্যামানের অবস্থান জানা যায়। এটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি।
বিস্তার পরিমাপের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।
কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাণসমূহ কেবল নিবেশনের মধ্যকমানের অবস্থান পরিমাপ করে। মধ্যক মান থেকে সংখ্যাগুলোর ব্যবধান পরিমাণ করে না। এ কারনে মধ্যক মানের ভিত্তিতে দুই বা ততোদিক নিবেশনকে তুলনা করা হয়। তথ্যসারির কেন্দ্রীয় প্রবণতার থাকা সত্ত্বে ও প্রতিটি সংখ্যামানের কতটা নিকটবর্তী বা দূরে অবস্থান করছে সে সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। কারণ এর মাধ্যমে তথ্যসারির অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি সংখ্যামানের অবস্থান নির্ণয় করা হয়।
বিস্তার পরিমাপের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীতা:
১. নিবেশনের মানগুলোর বিকৃতিকে নির্ধারণ করে।
২. বিস্তার পরিমাপ কেন্দ্রীয় মানের নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করে।
৩. তাৎপর্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে বিস্তার পরিমাপের প্রয়োজনীয়তা আছে।
৪. মধ্যকমানের পরিবর্তনশীলতা নির্দেশ করে।
৫. আর্থ সামাজিক অসমতা নিরূপণে বিস্তার পরিমাপ ব্যবহার করা হয় বলে এর গুরুত্ব অত্যন্ত বেশী।
৬. উচ্চতর পরিসংখ্যানে এটা ব্যবহৃত হয়।
৭. তথ্যসারির তুলনা করতে এটি ব্যবহৃত হয়। অনেক সময় দেখা যায় দুটি নিবেশনের গড় মান সমান।
৮. যদি ও একটি নিবেশনের গড় হলে সংখ্যাগুলোর দূরত্ব অপর নিবেশনের হতে কম বা বেশী যেকোনটি হতে পারে।
বিস্তার পরিমাপের ৫টি বৈশিষ্ট্য তুলে ধর
পরিসংখানে কেন্দ্রীয় প্রবণতার সাহায্যে কোন তথ্যসারির কেন্দ্রীয়মান সম্পর্কে জানা যায়। কিন্তু কেন্দ্রীয় মান থেকে অন্যান্য রাশিগুলো কতটুকু বিস্তৃত তা জানা যায় না। তাই কোন নিবেশন বা তথ্যসারির কেন্দ্রীয় মান থেকে তথ্যসমূহের বিস্তৃতি জানার জন্য যে পরিমাণ পদ্ধতি অনুসরন করা হয় তাকে বিস্তার পরিমাপ বলে। তাই কেন্দ্রীয় মান বা গড়ের চারদিকে অন্যান্য রাশিসমূহ কিভাবে বিস্তৃত তার পরিমাপই হচ্ছে বিস্তার পরিমাপ।
বিস্তার পরিমাপের বৈশিষ্ট্য: একটি আদর্শ বিস্তার পরিমাপের নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যাবলি থাকা আবশ্যক-
১. বিস্তার পরিমাপসমূহ তুলনাযোগ্য পরিমাপ।
২. নমুনা বিচ্যুতি দ্বারা তেমন প্রভাবিত হয় না।
৩. প্রান্তীয় মান দ্বারা কম প্রভাবিত হয়।
৪. গাণিতিক ও বীজগণিত নিয়ম প্রয়োগযোগ্য।
৫. বিস্তার পরিমাপ গণনা করা সহজ।
৬. এটি নিবেশনের সকল মান দ্বারা নির্ণীত হয়।
৭. বিস্তার পরিমাপের সংজ্ঞা সহজে বেঝা যায়।
কোন নিবেশনের অন্তর্ভুক্ত তথ্যগুলো কতটুকু ভিন্নতা প্রদর্শন করে তার উপর বিস্তৃতির প্রকৃতি নির্ভর করে।

No comments:
Post a Comment